নিউজ ডেক্স:
মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম আবারও নিজের গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন। ফুটবল কসরতে পারদর্শী এই প্রতিভাবান ব্যক্তি মাথার ওপর ফুটবল রেখে টানা ২০.১৩২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার পথে এগিয়ে গেছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাগুরার ইনডোর স্টেডিয়ামে তিনি এই অসাধারণ কীর্তি গড়েন। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু করে তিনি থামেন ১২টা ১৯ মিনিটে। ৭১.৯ মিটার ল্যাপে ২৮০ বার চক্কর দেন তিনি, যা মোট ১ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট সাইকেল চালানোর সমান। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, পুরো সময়জুড়ে একবারও ফুটবল মাথা থেকে পড়েনি, এমনকি তিনি হাত দিয়েও বল নিয়ন্ত্রণ করেননি।
নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙছেন!
এর আগেও ফুটবল কসরতের জন্য তিনবার গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন আব্দুল হালিম। ২০১১ সালে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে মাথায় বল রেখে ১৫.২ কিলোমিটার হাঁটার রেকর্ড গড়েছিলেন। ২০১৫ সালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ১০০ মিটার রোলার স্কেটিং করে মাত্র ২৭.৬৬ সেকেন্ডে রেকর্ড গড়েন।২০১৭ সালে ঢাকায় মাথায় বল রেখে সাইকেল চালিয়ে ১৩.৭৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে গিনেস রেকর্ড করেন। এবার তিনি নিজেরই সেই ২০২৫ সালের রেকর্ড ভেঙে ২০.১৩২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন এবং নতুন রেকর্ড গড়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন।
নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন!
স্থানীয় সাংবাদিক মো. সুজন মাহমুদ পুরো ঘটনা ভিডিওতে ধারণ করেছেন। তিনি বলেন, “ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো ছোট জায়গায় তিনি প্রায় দুই ঘণ্টা বল মাথায় নিয়ে একইভাবে সাইকেল চালিয়ে গেলেন! এমনকি তিনি পানিও খেলেন, কিন্তু বল মাথা থেকে পড়েনি। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন!”
সংসারে কষ্ট, স্পন্সর নেই, তবুও এগিয়ে চলা :
মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা আব্দুল হালিম গত ৩৩ বছর ধরে ফুটবল কসরত শিখেছেন ও বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু এই প্রতিভাবান ব্যক্তি আজও আর্থিক কষ্টে দিন পার করছেন।তিনি বলেন, “আগে রেকর্ড করতে স্পন্সর ছিল, কিন্তু এবার কোনো স্পন্সর নেই। রেকর্ড গড়তে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, প্রচুর খরচও হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে সব সম্ভব হয় না।”
সরকারি সহযোগিতা চান এই প্রতিভাবান ফুটবলশিল্পী:
আব্দুল হালিম চান, নতুন প্রজন্ম এই ফুটবল কসরত শিখুক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের নাম আরও উজ্জ্বল করুক। কিন্তু তিনি মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।তিনি বলেন, “আমি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে দেশের নাম তুলেছি, কিন্তু রাষ্ট্র আমাকে কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। সরকারি সাহায্য পেলে আমি আরও নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে পারব এবং তরুণদের শেখাতে পারব।”
স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা না পেলে তরুণরা কেন দেশের জন্য কাজ করবে?
আক্ষেপের সুরে আব্দুল হালিম বলেন,“আমি দেশের নাম বিশ্ব দরবারে তুলেছি, কিন্তু সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। তরুণ প্রজন্ম যদি দেখে যে এত কষ্ট করেও কোনো স্বীকৃতি নেই, কোনো আর্থিক সহায়তা নেই, তাহলে তারা কেন দেশের জন্য কাজ করবে? আমি চাই, সরকার ও সমাজ আমাদের মতো প্রতিভাবানদের পাশে দাঁড়াক, যেন আমরা আরও বড় কিছু করতে পারি।”
নতুন রেকর্ডের স্বীকৃতি পেতে সময় লাগবে:
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের নিয়ম অনুযায়ী, স্থানীয় কমিটির সামনে ভিডিও ধারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি এবং তা গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পরই চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।তবে একাধিকবার রেকর্ড গড়া এই প্রতিভাবান ব্যক্তি এখনই আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমি চাইলে সারাদিন এভাবে বল মাথায় নিয়ে সাইকেল চালাতে পারব। রেকর্ডের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেলে সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।”অবিশ্বাস্য দক্ষতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের নাম বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন আব্দুল হালিম। এবারও তাঁর নতুন রেকর্ড স্বীকৃতি পাবে কি না, তা নির্ভর করছে গিনেস কর্তৃপক্ষের যাচাই-বাছাইয়ের ওপর।
সরকারি সহায়তা ও স্বীকৃতি জরুরি
অবিশ্বাস্য দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন আব্দুল হালিম। এবারও তাঁর নতুন রেকর্ড স্বীকৃতি পাবে কি না, তা নির্ভর করছে গিনেস কর্তৃপক্ষের যাচাই-বাছাইয়ের ওপর।
কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো— দেশের জন্য যারা এত কিছু করেন, তারা যদি স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা না পান, তাহলে ভবিষ্যতে কে এগিয়ে আসবে?
Office : Vaina Mor, Magura, Bangladesh. Mobile : 01714-518595, Email : magurarkagoj.com@gmail.com
© All rights reserved © 2025 মাগুরার কাগজ
Leave a Reply