নদীভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছেন এলাকাবাসী, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি:
খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদে অব্যাহতভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন চললেও এই কার্যক্রমের পেছনে থাকা মূল হোতারা এখনও প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, নদী ভাঙনের জন্য বালু ব্যবসায়ীদের একটি প্রভাবশালী চক্র সরাসরি দায়ী। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদী থেকে দিনের পাশাপাশি রাতেও বালু উত্তোলন চলছে। ফলে নদীর পাড় ধসে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও জনপদ নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা বালু ব্যবসায়ী হারুন গাজী, কালাম মেম্বার ও শফিকুল ইসলামের মতো ব্যক্তিরা প্রশাসনিক নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী সাহসিকতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে তিনজনকে আটক করেছেন। সচেতন মহল তাঁর এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানালেও প্রশ্ন তুলেছেন— অভিযানে শুধুমাত্র মাঠপর্যায়ের লোকজনকে আটক করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
নদীপাড়ে বসবাসরত একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার জানিয়েছে, তারা প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের শিকার হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, মূল অপরাধীরা রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষকের ভাষ্য অনুযায়ী, জমি ও বাড়ি হারানোর পরও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না, বরং অসহায়ভাবে সব সহ্য করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, কেবল শ্রমিক বা মাঝারি পর্যায়ের লোকদের আটক করে দায় শেষ করলে সমস্যার মূল সমাধান হবে না। বালু উত্তোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ও নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় না আনলে নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।
তাঁরা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানানো হলেও ‘উপরে মহল’ পর্যন্ত গেলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ফলে নদীপাড়ের অসহায় পরিবারগুলোর দুর্ভোগ দিনকে দিন বাড়ছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়েছে:
১. বালু উত্তোলনের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করা;
২. অবৈধ ড্রেজার ও ট্রলার অপারেশন বন্ধ করা এবং নদী সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া;
৩. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পূনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা।
কয়রার সাধারণ মানুষের বক্তব্য, প্রশাসন যদি ইচ্ছা করে, তবে বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এখন পর্যন্ত মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
© All rights reserved © 2025 magurarkagoj.com