নিজস্ব প্রতিনিধি | মাগুরা, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | মাগুরার কাগজ
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরা জেলার দুইটি আসনেই বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভাজন তীব্র আকার ধারণ করেছে। জেলা বিএনপির একাধিক প্রভাবশালী নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অনুসারী ও বলয় গড়ে পৃথক কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। ফলে দলীয় ঐক্য মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রার্থীতা ঘিরে প্রতিযোগিতা
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মাগুরা-১ (মাগুরা সদর ও শ্রীপুর) এবং মাগুরা-২ (মহম্মদপুর ও শালিখা, মাগুরা সদরের চারটি ইউনিয়ন) আসনে অন্তত চারজন সিনিয়র নেতা, দুইজন তরুণ নেতা এবং একজন সাবেক মন্ত্রীর মেয়ে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে তারা কেউই পারস্পরিক আলোচনায় বসছেন না। বরং প্রত্যেকে নিজস্ব বলয় ও তৃণমূল কমান্ড তৈরি করে পৃথক সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক যোগাযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
কিছু নেতা দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন, আবার অনেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে মনোনয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।
সাংগঠনিক শূন্যতা ও পুনর্গঠন সংকট
জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর অধীনস্থ সব ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চললেও তা ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে স্থানীয় নেতারা মন্তব্য করেছেন।বহু কর্মীর অভিযোগ, দলের ঐক্যের চেয়ে অনেক নেতা নিজের অবস্থান মজবুত করাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তাদের মতে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বদলে নেতারা বিভাজনকেই রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা এতটাই তীব্র যে, তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মাগুরা জেলা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হেসেন তার ফেসবুক পেজে দলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন:“জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা জেলায় দুইটি আসন। এই আসনগুলো থেকে বিএনপি থেকে যে কয়জন নেতা ইতিমধ্যে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, এবং জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ দলকে বিভাজনের জন্য যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন, তারা সকলে অব্যাহতভাবে তা প্রয়োগ করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রত্যেক নেতা ব্যস্ত কিভাবে দলকে বিভক্ত রাখা যায় সেই কাজে। আমাদের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর জেলা বিএনপির অধীনস্থ সকল ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করে সাংগঠনিকভাবে দল শূন্য করা হয়েছে। এখন দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে, কিন্তু প্রার্থীরা যদি নিজ নিজ বলয় সৃষ্টি করে আলাদা কর্মসূচি পালন করেন এবং আমাদেরকে দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেন, এটি কতটা যুক্তিযুক্ত তা নেতাদের কাছে প্রশ্ন। আমার মনে হয় এটি দলের সাথে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। দল ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন, তাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি
জেলা বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে মাগুরায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তারা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয়ভাবে পদক্ষেপ না নিলে দল শুধু সাংগঠনিক নয়, রাজনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়বে।
জামায়াতের উত্থান
রাজনৈতিক মাঠে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকটের সুযোগ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জামায়াতের তৃণমূল ভিত্তি মাগুরায় দিন দিন শক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলায় জামায়াতের কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান।
একজন সাবেক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ফলে ভোটাররা বিকল্প শক্তির দিকে ঝুঁকছেন, এবং জামায়াত সেই সুযোগ দ্রুত কাজে লাগাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাংগঠনিক শূন্যতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতিকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এক স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন, বিএনপি যদি অভ্যন্তরীণ ঐক্য গঠনে ব্যর্থ হয়, তাহলে আসন্ন নির্বাচনে দলটি কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে চলে যেতে পারে।
শেষ কথা
মাগুরার রাজনৈতিক চিত্রে দুটি বিষয় স্পষ্ট—বিএনপি সাংগঠনিক সংকটে ভুগছে, আর জামায়াত ধীরে ধীরে মাঠে জায়গা দখল করছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আসন্ন নির্বাচনে মাগুরায় বিএনপি বড় ধরনের রাজনৈতিক ধাক্কার মুখে পড়তে পারে। হাতছাড়া হতে পারে মাগুরা-১ ও ২ আসন। বিশেষ করে মাগুরা -১
© All rights reserved © 2025 magurarkagoj.com