মাগুরার আট বছরের ফুটফুটে শিশু আছিয়া আজ আর আমাদের মাঝে নেই। নিষ্ঠুর এক ঘটনায় তার ছোট্ট জীবন থেমে গেছে, রেখে গেছে এক অমোচনীয় বেদনা, রেখে গেছে এক চিরকালীন প্রশ্ন—আমরা কি আমাদের শিশুদের নিরাপদ রাখতে পারছি?
মাগুরা জেলা মহিলা দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ,পাপিয়া শারমিন জানান, আছিয়ার এই নির্মম পরিণতি কোনো ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজের গভীর অসুস্থতার প্রকাশ। শিশুদের প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, এবং নারীর প্রতি অবিচার—এসবের শিকার আজ কেবল আছিয়া নয়, অগণিত শিশুরা। তাদের কান্না আমাদের কানে পৌঁছালেও, আমরা কি সত্যিই তাদের জন্য কিছু করছি?কেন আমরা শিশুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি? কেন আমাদের সমাজ এখনো মনে করে, ধর্ষণ বা নিপীড়নের শিকার হলে নারীরই দোষ? এই বিকৃত মানসিকতা পরিবর্তন না হলে, আমরা বারবার নতুন আছিয়াদের মৃত্যু দেখব।
শিশুটির মা জানান, তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারটি চরম সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বামীর চিকিৎসার জন্য সহায়তা চান তিনি।মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খানও শিশুটির বাড়িতে যান। তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।মনোয়ার হোসেন খান বলেন, শুধু ন্যায়বিচার নয়, আমরা চাই পরিবারটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াক। দলের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দেব।
মাগুরা হোঃ শঃ সোঃ কলেজের ছাত্রদলের যুগ্ন-আহবায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, আছিয়ার মৃত্যুর পর দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মানুষ প্রতিবাদ করছে, বিচার চাচ্ছে। কিন্তু কেবল অপরাধীদের শাস্তি দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? আসল পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন পরিবার থেকে শুরু করে পুরো সমাজ যৌন নিপীড়ন এবং শিশুদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতন হবে।
মাগুরা সিভিল সার্জন শামীম কবীর বলেন,আমাদের সন্তানদের শেখাতে হবে—তাদের শরীর তাদের নিজস্ব, কেউ অযথা স্পর্শ করলে সেটা ভুল, এবং তারা সবসময় নিজের কষ্টের কথা পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারবে। সেই সাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিচারে দীর্ঘসুত্রতা কমাতে হবে। এবং বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আছিয়ার মৃত্যু আমাদের জন্য শেষ সতর্কবার্তা হওয়া উচিত। এখনই সময়, আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করি। পরিবার, বিদ্যালয়, এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রতি যে কোনো সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। আর তাহলেই হয়তো আছিয়ার কান্না থামবে।
সেইভ দ্যা উইমেন এন্ড সিল্ড্রেন এর মাগুরা জেলার নির্বাহী পরিচালক সাবিনা ইয়াছমিন মেরী বলেন,“আমরা যদি আজও চোখ বন্ধ করে রাখি, তাহলে হয়তো আগামীকাল আরেকটি আছিয়ার কান্না আমাদের বিবেককে নাড়া দেবে। কিন্তু তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমাদের শিশুদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, এখনই বদলাতে হবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের সমাজ। আর কোনো আছিয়া যেন হারিয়ে না যায়—এই শপথ নিতে হবে আমাদেরই।”
Office : Vaina Mor, Magura, Bangladesh. Mobile : 01714-518595, Email : magurarkagoj.com@gmail.com
© All rights reserved © 2025 মাগুরার কাগজ